দেশের ইবতেদায়ী মাদ্রাসাগুলোকে স্বীকৃতি দিয়ে জাতীয়করণ করা না হলে বৈষম্য দূর হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকরা প্রায় ৪০ বছর ধরে অনেকটা বিনা বেতনে কুরআনের প্রাথমিক শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে। তাদেরকে স্বীকৃতি দিয়ে উপযুক্ত সুযোগ সুবিধা না দিলে বৈষম্য দূর হবে না। যে বৈষম্য দূর করার জন্য আবু সাঈদ, মুগ্ধরা জীবন দিয়েছেন। এটা তাদের রক্তের সাথে বেঈমানী।
আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক ঐক্যজোটের অবস্থান ধর্মঘটে উপস্থিত হয়ে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান এসব কথা বলেন।
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক নিবন্ধনকৃত বৈষম্যের শিকার সকল স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ন্যায় জাতীয়করণের দাবীতে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক ঐক্যজোটের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গত রবিবার থেকে অবস্থান ধর্মঘট পালন করছে ইবতেদায়ী শিক্ষকরা। আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে অবস্থান ধর্মঘটে একাত্মতা প্রকাশ করেন অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের আমীর মু. নূরুল ইসলাম বুলবুলসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ব্রিটিশ সরকার ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মাদ্রাসা শিক্ষাকে আলাদা করে মুসলমানদেরকে কোরআন শিক্ষাকে থেকে দূরে রাখার ব্যবস্থা করেছিল। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর ৯২ ভাগ মুসলমানের এ দেশে শিক্ষা ব্যবস্থার প্রধান বিষয়বস্তু হওয়ার কথা ছিল আল কোরআন। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের দেশে আজ পর্যন্ত কোরআনের শিক্ষা সেভাবে চালু নাই। যতদিন কোরআন শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা না হবে, ততদিন এই শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে চোর আর ডাকাত উৎপাদন হতে থাকবে। চোর, ডাকাত, খুনী উৎপাদনকারী এ শিক্ষা ব্যবস্থা আমরা চাই না।
তিনি বলেন, অতীতে যা হওয়ার হয়েছে, ভবিষ্যতে আমরা আর এমন বৈষম্য দেখতে চাই না। ইবতেদায়ী শিক্ষকদের উপযুক্ত সম্মান দিতে হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে যেভাবে সরকার স্বীকৃতি দিয়েছে, জাতীয়করণ করেছে, ইবতেদায়ী মাদ্রাসাকেও অনুরুপভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে। ইবতেদায়ী শিক্ষকদেরকে অনুরুপ সুযোগ সুবিধা দিতে হবে।
এ সময় ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, দেশের তৃণমূল পর্যায়ে প্রাথমিকভাবে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার ক্ষেত্রে ইবতেদায়ী মাদ্রাসাসমূহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু এখন পর্যন্ত একটি ইবতেদায়ী মাদ্রাসাও সরকারি করা হয়নি। ইসলামি চেতনার বিকাশকে রুদ্ধ করে দেওয়ার জন্য ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ইবতেদায়ী মাদ্রাসার নিবন্ধন বন্ধ করে রাখা হয়েছে। অবিলম্বে এই নিবন্ধন চালু করতে হবে।
বর্তমান সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে আপনারা ক্ষমতায় বসেছেন। কিন্তু ইবতেদায়ী মাদ্রাসার প্রতি যে রকম বৈষম্য করা হচ্ছে, আর কোনো সেক্টরের প্রতি এতটা বৈষম্য করা হয়নি। ৫ আগস্টের চেতনাকে ধারণ করে যদি কোনো কাজ করতে হয়, তাহলে সবার আগে ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকদের সঙ্গে বসে তাদের দাবী দাওয়া মেনে নিন। ইবতেদায়ী মাদ্রাসাকে অবিলম্বে জাতীয়করণের আওতায় নিয়ে আসুন।