বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান যাকাত ও ওশর শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সূধী সমাবেশে বলেন, ইসলামের ফরজ বিধান সমূহের মধ্যে অন্যতম একটি বিধান হলো যাকাত। ইসলামের ৫টি স্তম্ভর মধ্যে তৃতীয় হচ্ছে এই যাকাত। মাহে রমজানের শুরুতেই যাকাত আদায়ের মাধ্যমে আমাদের সম্পদকে পবিত্র করতে হবে। যাকাত ফরজ হয় নিসাব পরিমাণ মালের মালিক হলে, সেক্ষেত্রে সম্পদের হিসাব থেকে ২.৫% যাকাত আদায় করতে হবে। যাদের ফসলের উপরে আয় রয়েছে তাদেরকে ওশর আদায় করতে হবে। সম্পদের উপরে দুই ধরনের যাকাত রয়েছে, একটা বস্তুগত সম্পদ এবং অন্যটি ফসলী উৎপাদনের উপরে। নিসাবের ২টা মানদন্ড আছে, স্বর্ণ ও রূপার ক্ষেত্রে। যাকাত আদায়ের অর্থ হচ্ছে আমার সম্পদকে পবিত্র করা। সম্পদশালীদের জন্য দু’টি অন্যতম ফরজ বিধান যাকাত ও হজ্ব পালন। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত ৮টি নির্দিষ্ট খাতে যাকাতের অর্থ ব্যয় করতে হবে। সমাজসেবা বিভাগের মাধ্যমে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যাকাত দাতাদের কাছ থেকে যাকাত আদায় ও বন্টণের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে শনিবার সন্ধ্যায় “যাকাত ও ওশর” শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সূধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সমাবেশে ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠায় যাকাত শীর্ষক আলোচনা রাখেন প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে মুহা. দেলাওয়ার হোসাইন ও আবদুল জব্বার, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুস সবুর ফকির, অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খান, শামছুর রহমান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য এডভোকেট এস এম কামাল উদ্দিন সহ প্রমূখ নেতৃবৃন্দ।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি সফল ইসলামী সমাজ বিনির্মানের স্বপ্ন দেখে এবং যখন ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে তখন রাষ্ট্রের কাছে এই যাকাত আদায় ও বন্টণের দায়িত্ব ন্যস্ত হবে। তখন যাকাত ব্যবস্থাপনা সরকার-ই সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করবে এবং পাওনাদাররা সুষ্ঠুভাবে এই যাকাত থেকে তাদের প্রাপ্য বুঝে পাবেন। যাদের মালে নিসাব আছেন প্রত্যেককে যার যার আয়ের হিসাব থেকে যাকাত আদায় করতে হবে। শুধুমাত্র পিতার আয়ের উপর নয়, পরিবারের অন্য সদস্যদের ব্যক্তিগত আয়ের উপরেও যাকাত প্রদান করতে হবে। যাকাত দিলে মাল পবিত্র হয় এবং বারাকাহ বা প্রবৃদ্ধি বাড়ে। যাকাত আদায় না করে নিজে খেয়ে অনেকে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। পবিত্র কুরআনে যেখানে আল্লাহর পক্ষ থেকে নামাজের কথা বলা হয়েছে, সাথে সাথেই যাকাত আদায়ের কথাও সেখানে বলা হয়েছে। সকল সম্পদের উপরে হিসাব করে যাকাত দিতে হবে। অন্যদিকে ফসলের উপরেও ওশর দিতে হবে। প্রাকৃতিক নিয়মে বৃষ্টি মারফত যদি ফসল হয় তাহলে ১০ ভাগের ১ ভাগ ওশর আদায় করতে হবে। পবিত্র কুরআনে ৮টি খাত উল্লেখ রয়েছে যাকাত প্রদানের। তার মধ্যে একটি হচ্ছে দাস মুক্তি। বিশেষ করে আজকের সময়ে যারা বিনা অপরাধে কারাগারে জেল খাটছেন। বিশিষ্ট আলেম ওলামারা মনে করেন, বন্দি মুক্তির জন্য এক্ষেত্রে যাকাত দেয়া যাবে। তিনি রমজানের শুরুতেই অন্যতম ফরজ বিধান যাকাত ও ওশর আদায়ের মাধ্যমে সবাইকে ইবাদত বন্দিগীতে মনোযোগী হওয়ার উদাত্ত্ব আহবান জানান।
মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, যাকাত কোন অনুগ্রহ নয়। রাসূল (সা.) যাকাতের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, তা ধনী ব্যক্তিদের কাছ থেকে আদায় করে অভাবগ্রস্থদের মাঝে বিতরণ করতে হবে। ধনীদের সম্পদের উপর আল্লাহ বিত্তহীনদের অধিকার দিয়েছেন। আর বিত্তবানদের সেই হক আদায় করতে হবে। মূলতঃ যাকাত ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মধ্যেই আর্তমানবতার অর্থনৈতিক মুক্তি রয়েছে। আর ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই যাকাত ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। তিনি ইসলামী সমাজ বিনির্মাণে সকলকে আপোষহীনভাবে কাজ করার আহবান জানান।
প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী বলেন, যাকাত একটি ফরজ ইবাদত। এটি গরীব দুঃখীদের হক। এটি তাদের প্রতি কোন করুনা বা কৃপা নয়। আল্লাহ পবিত্র কুরআনের যত স্থানে সালাতের কথা বলেছেন সাথে সাথে যাকাতের কথাও বলেছেন। যাকাত দেয়া মুত্তাকির আলামত। যারা সম্পদ অর্জন করেছেন, তাদের জন্য যাকাত আদায় করা অত্যন্ত জরুরি। যদি কেউ সেচ্ছায় যাকাত আদায় না করেন, সেখানে সরকারি ভাবে যাকাত আদায় করার ব্যবস্থা করতে হবে অথবা ইসলামী সংগঠনের মাধ্যমেও যাকাত আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে। কারো কাছে মালে নিসাব ১ বছর পূর্ণ হলে যাকাত দেয়া ফরজ হয়ে যাবে। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়ার আশায় নিসাবে মালের যারা মালিক আছি সবাই সঠিক পন্থায় যাকাত আদায় করি।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, যাকাত সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে এটা আদায় হওয়ার নিয়ম রয়েছে। যেহেতু রাষ্ট্রীয়ভাবে আমাদের দেশে এটা কায়েম নেই। সেহেতু বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই যাকাত আদায় ও বিতরণের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে যাকাত বণ্টনের ৮টি খাতকে বিবেচনা করে এই যাকাত ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করছি। সাহেবে নিসাব যারা আছেন, তাদেরকে আহবান জানাই আমাদের এই যাকাত আদায় কার্যক্রমে যাকাত প্রদান করে এবং সেই সাথে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত নির্ধারিত ৮টি খাতে যথাযথভাবে বণ্টণ করার সুযোগ প্রদানে এগিয়ে আসুন।
তিনি তার বক্তব্যের শেষান্তে অসুস্থ সাবেক আমীরে জামায়াত জনাব মকবুল আহাম্মদের সুস্থতা কামনাসহ করোনা রোগে আক্রান্ত হয়ে যারা অসুস্থ্য বা হাসপাতালে ভর্তি আছেন সবার দ্রুত সুস্থ্যতায় মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে দোয়া করেন এবং এহেন পরিস্থিতিতে আল্লাহর রহমত ও সাহায্য কামনা করেন।