বাংলাদেশের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ আব্দুর রফিক আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।
তিনি ১৯৪১ সালের ৫ জানুয়ারি নরসিংদী জেলার রায়পুরায় জন্মগ্রহণ করেন। আব্দুর রফিক শিক্ষাজীবনে ১৯৫৯ সালে তৎকালীন আহসানুল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (বর্তমান বুয়েট) থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডিপ্লোমা, ১৯৬৪ সালে পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ এএমআইই (বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং) সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে, ১৯৭৫ সালে ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে টেকনিক্যাল অ্যান্ড ভোকেশনাল এডুকেশনে পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিগ্রি সহ জাপান, জার্মানি, ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির বোল্টন কলেজ অব হায়ার এডুকেশন এবং ইউনেস্কো প্যারিস আঞ্চলিক কেন্দ্রসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা নীতি, বিশ্লেষণ ও পরিকল্পনা বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
পেশাগত জীবনে আব্দুর রফিক কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, এবং ইউনেস্কো ঢাকা অফিসের প্রোগ্রাম অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি কলম্বো প্ল্যান স্টাফ কলেজ, সিঙ্গাপুরে ফ্যাকাল্টি কনসালট্যান্ট এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি ১৯৯৬ সালে সেন্টার ফর অকুপেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশন (কোর) নামে একটি শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন যার আমৃত্যু প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসবে অনেক গবেষণা সম্পাদন করেছেন।
দেশের শিক্ষা খাতের উন্নয়নে আব্দুর রফিক অসামান্য অবদান রেখেছেন। তিনি দেশের প্রতিটি শিক্ষা কমিশনে সদস্য/উপকমিটি সমূহের প্রধানহিসেবে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করেন। বিশেষ করে দেশের কারিগরি, বৃত্তিমূলক ও পেশাভিত্তিক শিক্ষার উন্নয়নে তাঁর অসামান্য ভূমিকা প্রনিধানযোগ্য। এসএসসি ভোকেশনাল, এইচএসসি ভোকেশনাল, এইচএসসি (বিজনেস ম্যানেজমেন্ট), এবং ডিপ্লোমা ইন অ্যাগ্রিকালচার শিক্ষাক্রমসমূহ তাঁর নিজস্ব গবেষণা ও প্রত্যক্ষ তদারকিতে প্রবর্তিত হয়। এছাড়াও তিনি দেশের সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। ২০১৬ সালে তাঁর প্রণীত “Build Skills Bangladesh for Emerging Bangladesh as a Developed Nation” গবেষণার ভিত্তিতে বাংলাদেশ জাতীয় যোগ্যতা কাঠামো (BNQF) প্রনীত এবং অনুমোদিত হয়। ২০২৩ সালে তিনি “The Emerging Nation: Unveiling the Living Treasure”শীর্ষক গবেষণা গ্রন্থ প্রকাশ করেন, যেখানে বিএনকিউএফ বাস্তবায়নে এবং শিক্ষা সংস্কারে ২৩টি মৌলিক সংক্ষার সুপারিশ উত্থাপন করা হয়েছে।
ব্যক্তিগত জীবনে আব্দুর রফিক স্ত্রী, এক পুত্র, দুই কন্যা এবং অগণিত গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। আমরা এই মহান শিক্ষাবিদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।