বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, রমজান মাস তাকওয়া অর্জনের মাস। মাহে রমাদান আমাদের সামনে সমাগত হয়েছে। এই রমাদান মাস হচ্ছে কুরআন নাযিলের মাস। রমজান মাস হচ্ছে সত্য-মিথ্যার পার্থক্য তৈরি করে দেওয়ার মাস। এই রমাদান মাস হচ্ছে আত্মশুদ্ধি ও তাকওয়া অর্জনের মাস। এই রমজান মাস হচ্ছে সকল মাসের মধ্যে বরকতপূর্ণ মাস। রহমত, বরকত ও মাগফেরাতের সওগাত নিয়ে রমজান আমাদের মাঝে সমাগত। রমাদান মাসে আল্লাহর ইবাদত বন্দেগী সঠিকভাবে পালনের জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করে থাকে। এভাবেই মুসলমানেরা এভাবেই অব্যস্ত হয়ে আসছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য ৯০ ভাগ মুসলমানের এই দেশে, রোজা রাখার জন্য প্রস্তুতি নিতে গিয়ে অধিকাংশ মানুষই হিমশিম খাচ্ছে। দেশে উপর্যুপরি দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির ফলে জনগণের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। সাধারণ মানুষের জীবনযাপন অসহনীয় হয়ে পড়েছে। তিনি রমজানে দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরে বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং সকল জিনিসপত্রের দাম মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসার জন্য সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা গুলোর প্রতি উদাত্ত্ব আহবান জানান।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের পল্টন দক্ষিণ থানার উদ্যোগে মাহে রামাদান উপলক্ষ্যে ফুড প্যাকেট উপহার প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। মহানগরীর মজলিসে শুরা সদস্য ও পল্টন দক্ষিণ থানা আমীর শাহীন আহমদ খানের সভাপতিত্বে ফুড প্যাকেট উপহার প্রদান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন। আরও উপস্থিত ছিলেন পল্টন দক্ষিণ থানা সেক্রেটারি এডভোকেট মারুফুল ইসলাম, থানা কর্মপরিষদ সদস্য ওমর ফারুক, জামায়াত নেতা মেসবাহ উদ্দিন, মোহাম্মদ ইব্রাহিম সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, দেশে চরম দুর্নীতি, অনিয়ম বিশৃঙ্খলা, লুটপাট, ব্যাংক লুট করে দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করে এদেশের জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাপনকে দুর্বিষহ করে দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, দেশে বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পের নামে ও মেগা প্রজেক্ট দেখিয়ে সেখান থেকে জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কোষাগার আজ শূন্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের রিজার্ভ ফান্ড বিগত ৫০ বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ পর্যায়ে চলে এসেছে। এইভাবে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া হতে চলেছে। এখানে স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য যেটুকু খাবার প্রয়োজন জনগণের ভাগ্যে তা জুটছে না। গোটা বাংলাদেশের চিত্র একই। জনগণের ভোটবিহীন ক্ষমতায় বসা এই আওয়ামী সরকারের এটা নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই। অন্যদিকে অধিক পরিমাণে সুদ দিয়ে হলেও বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার জন্য তারা চেষ্টা করছে। এসব ঋণের শর্ত পূরণ করতে গিয়ে দেশের সকল দ্রব্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। জনগণের পকেট কাটতে পরিকল্পিতভাবে সবকিছুর দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন সবকিছুর দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। মূলত সরকার জেনে বুঝেই এসব দ্রব্যমূল্যের দাম বহুগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। সাময়িক ভাবে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য এসব করা হচ্ছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আমরা বলতে চাই, জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য সর্বপ্রথম দুর্নীতি মুক্ত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। জনগনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের নিজস্ব যে সামর্থ্য ও সম্পদ রয়েছে তা পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগাতে হবে। এদিকে দেশের মানুষের বিপদ ও দুর্যোগে মানবিক সহায়তা নিয়ে ছুটে চলা আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান দল, মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের কাছে শ্রদ্ধাভাজন ও সজ্জন ব্যক্তিত্ব। অথচ সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে ডা. শফিকুর রহমানকে গ্রেফতার করে রেখেছে। মূলত সরকার গোটা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতেই আমীরে জামায়াত ডাঃ শফিকুর রহমানকে বন্দী করে রেখেছে। অবিলম্বে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান সহ গ্রেফতারকৃত সকল জামায়াত নেতৃবৃন্দ ও আলেম ওলামাদের মুক্তির দাবি জানাচ্ছি ।
মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক একটি কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। সেই কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ধারাবাহিকতায় আমরা মানুষের পাশে থেকে যাবতীয় প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। সমাজের মানুষের সেবা ও সমাজ সংস্কারমূলক কাজ দৃঢ়তার সাথে আমরা পরিচালনা করে যাচ্ছি। এই রমজানেও আমরা ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ এলাকায় বসবাসকারী অস্বচ্ছল পরিবারের মাঝে ইফতার ও সাহরির ফুড প্যাকেট বিতরণের ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। ইতোমধ্যেই অসংখ্য মানুষের কাছে আমাদের সাহায্য সহযোগিতা পৌছিয়ে দেয়া হয়েছে এবং খুঁজে খুঁজে এসব মানুষের কাছে ইফতার ও সাহরির ফুড প্যাকেট পৌঁছানোর কাজ চলমান রয়েছে। আমরা বাংলাদেশকে সুখি ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখি। যেখানে সকল নাগরিকের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। তিনি অসহায় মানুষের রোজা পালনে সহায়তার জন্য সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার উদাত্ব আহবান জানান।
এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, রোজার এই সময়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে মানুষের মাঝে নাভিশ্বাস উঠেছে। চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ থেকে শুরু করে তেল গ্যাস সবকিছুর মূল্য আকাশচুম্বি ও মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে চলে গেছে। এ অবস্থায় মানুষ রোজা পালনের জন্য জরুরি প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে সক্ষম হচ্ছে না। দেশের এই অসহনীয় অবস্থায় আমরা রাজপথে জনগণের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ভূমিকা পালন করছি। তিনি অতিসত্তর দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরার দাবি জানান।