মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় নূরুল ইসলাম বুলবুল
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেছেন, শোষণ, বঞ্চনা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল। কিন্তু মহান স্বাধীনতার ৪৮ বছর অতিক্রান্ত হলেও দেশে ন্যায়বিচার ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। অর্থনৈতিক মুক্তি না পেয়ে ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও বৈষম্যের যাঁতাকলে বিপর্যস্ত এ দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী। বাকশাল ও স্বৈরতন্ত্রের কবলে পড়ে গণতন্ত্র আজ নির্বাসনে গেছে। গণতন্ত্র ও মৌলিক অধিকার সংবিধান স্বীকৃত হলেও ক্ষমতাসীন দল তা হরণের মাধ্যমে স্বাধীনতার চেতনা ধ্বংস করে দেশে জুলুমতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছে। ফলে স্বাধীনতার স্বাদকে পুরোপুরি অর্থবহ করতে হলে দেশপ্রেমিক জনতাকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বৈরাচার জুলুমবাজ ও ফ্যাসিবাদী অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে গর্জে উঠতে হবে। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মদানকারী সকলের অবদানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
আজ সোমবার রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আয়োজিত মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ এর সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুস সবুর ফকির, মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য শ্রমিক নেতা আব্দুস সালাম, আ.জ.ম. রুহুল, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিশে শুরা সদস্য আমিনুর রহমান, উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিশে শুরা সদস্য আশরাফুল আলম ইমন, শাহীন আহমদ খান, খন্দকার মিজানুর রহমান প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে বাকশালী কায়দায় ব্যবহার করে বিরোধী মতকে দমন ও রাজনীতি শুন্য করেছে। দেশে মত প্রকাশের কোন স্বাধীনতা নেই। সরকার কালা আইন তৈরীর মাধ্যমে গণমাধ্যমের কন্ঠরোধ করেছে। প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন দল দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে। নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে নির্বাচন কমিশনকে ঠুঠো জগন্নাথে পরিনত করেছে। দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা যখন সময়ের দাবি সেখানে পরিকল্পিতভাবে বিভেদ সৃষ্টি করে দেশের রাজনীতিকে অস্থিতিশীল করে রাখা হয়েছে। পিলখানা ট্রাজেডীর মাধ্যমে স্বাধীনতার প্রতীক দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী ও অতন্দ্র প্রহরী বিডিআরকে ধ্বংস করেছে। এ সরকারের আমলে অর্থনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তেল-গ্যাসের মুল্য বৃদ্ধি, দুর্নীতি, লুটপাট, চাদাঁবাজি ও দলীয়করণের কারণে সরকার সকল ক্ষেত্রে চরমভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গুম, খুন ও অপহরণসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। ফলে জনগণের মধ্যে চরম আতংকের সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে স্বাধীনতার সুফল অর্জন করা সম্ভব নয়। তাই তিনি গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং দুর্নীতিমুক্ত, ন্যায়-ইনসাফ ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়তে সকলকে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানান।
তিনি আরোও বলেন, গণতন্ত্র, মানবিক মূল্যবোধ ও সাম্য মহান স্বাধীনতার মূলমন্ত্র হলেও প্রতিহিংসা ও বিভাজনের রাজনীতির কারণে আমরা সে লক্ষ্য অর্জন করতে পারিনি। আত্মনির্ভরশীলতা মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের চেতনা হলেও এখনও আমরা পশ্চাদপদ। অপরদিকে আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আজ হুমকির সম্মুখীন। দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে চলছে নানামুখী ষড়যন্ত্র। স্বাধীনতা সংগ্রাম ছিল এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন। কিন্তু অনেক আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে মানুষের অধীকার, আইনের শাসন, মানবাধিকার আজ ভূলুন্ঠিত। মানুষ অন্যায়ের প্রতিবাদ পর্যন্ত করতে পারছেনা। ক্ষমতাসীনদের অপরাজনীতি ও দুঃশাসনের কারণে দীর্ঘকালের পরিক্রমায়ও মানুষের অধীকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তাই মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকলকে ঐক্যবদ্ধ ভুমিকা পালন করতে হবে।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, জাতির জন্য দুর্ভাগ্য যে, আজ পরিকল্পিতভাবে স্বাধীনতার চেতনা ও ইসলামকে পরস্পরের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো হচ্ছে। অথচ ইসলামই জনগনকে প্রকৃত মুক্তি ও স্বাধীনতার স্বাদ দিয়েছে। তথাকথিত স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ও চেতনাধারীরা স্বাধীনতার লাইসেন্স হিসেবে খুন ধর্ষন ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে জনগনের স্বাধীনতাকে ধুলিস্যাৎ করছে। তিনি জনগনকে প্রকৃত মুক্তির স্বাদ গ্রহনের জন্য ইসলামকে বিজয়ী করার উদাত্ত আহবান জানান।
আব্দুস সবুর ফকির বলেন, ইংরেজদের ২০০ বছরের গোলামীর জিঞ্জীর ভেঙ্গে মুসলমানেরা এই ভূখন্ডে স্বাধীনতা এনেছিল। এরই প্রেক্ষাপটে ১৯৭০ এর নির্বাচন ও ১৯৭১ এ স্বাধীনতা এসেছে। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান রেখে যারা দেশকে মুক্ত করলো পরবর্তীতে সেই সেক্টর কমান্ডার সহ গুরুত্বপুর্ন অনেককেই স্বাধীনতা রক্ষার জন্য কারারুদ্ধ হতে হয়েছিল। জনগনের মৌলিক ও গনতান্ত্রিক অধিকার পূণঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য সেই চেপে রাখা ইতিহাসকে তরুন প্রজন্মের সামনে উপস্থাপন করতে হবে।